দুনিয়ার সকল প্রকার মত ও পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুধু মাত্র ইসলামকে গ্রহণ করার আহবান, ইসলামী আদর্শ মেনে নেওয়ার আহবান এটা এতোটা সহজ কাজ নয়। এ কাজ শুরু করলে খুব কাছের মানুষ গুলোও অপরিচিত রুপ ধারণ করে। এবং দাঈকে নির্বোধ ও বোকা মনে করে।
এটা শুধু এখন করে এমন নয় বরং নবী রাসুলদের সাথেও সে সময়ের লোকজন এমন আচরণ করতেন।
আল কুরআনে সুরা বাক্বারাহ,র ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাদেরকেই নির্বোধ বলেছেন।
وَ اِذَا قِیْلَ لَهُمْ اٰمِنُوْا كَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوْۤا اَنُؤْمِنُ كَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَهَآءُ١ؕ اَلَاۤ اِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَآءُ وَ لٰكِنْ لَّا یَعْلَمُوْنَ
আর যখন তাদের বলা হয়েছে, অন্য লোকেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো তখন তারা এ জবাবই দিয়েছে- আমরা কি ঈমান আনবো নির্বোধদের মতো? সাবধান! আসলে এরাই নির্বোধ, কিন্তু এরা জানে না।
দাঈ যখন দাওয়াতের কাজ শুরু করে তখন দেখা যায়
নিজ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনই দাওয়াতি কাজের বিরোধিতা ও বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। দীর্ঘ দিনের পরিচিত খুব কাছের বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে দাওয়াত নিয়ে গেলে তারাও অপরিচিতের মতনই আচরন করে। সমাজের প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির বাহিরে নতুন কিছু মেনে নেওয়ার আহবান অনেক চ্যালেন্জিং।
যারা যুগের পর যুগ সমাজের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তারা কখনো সমাজে নতুন কোন কিছু চালু হউক এটা চাইবে না,এটাই স্বাভাবিক। স্বয়ং রাহমাতুল্লিল আলামিন সাইয়্যেদুল মুরসালিন মুহাম্মাদ (সাঃ) এমন বাঁধার মুখোমুখি হয়েছেন। যেমন নবুয়তের ৬ষ্ঠ বছরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চাচা হযরত হামজাহ (রাঃ) এবং আরবের আরো একটি দল ইসলাম কবুল করার পর।
কুরাইশ নেতারা দ্বীনের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া জন্য বনী হাশেম এবং বনী আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ চুক্তিতে আবদ্ধ হন। চুক্তিটি হচ্ছে – প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কে কুরাইশদের নিকট হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত বনী হাশেম ও আব্দুল মোত্তালেব গোত্রের সাথে সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয় ও বিবাহ-সাদী বন্ধ থাকবে। এমন কি তাদের সাথে কোন প্রকার কথা-বার্তা, উঠাবসা ও চলা-ফেরা করা যাবেনা। কাফেররা চুক্তি পত্রটি কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে, যাতে সবাই সতর্ক হয় এবং সমাজচ্যুত হওয়ার ভয়ে মুসলমানদের সাথে সাক্ষাৎ না করে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাঃ সহ মুসলমানগন তিন বছর শিয়াবে আবি তালেবে অবরুদ্ধ ছিলেন। অবরুদ্ধ মুসলমানগন প্রচন্ড অভাব এবং ক্ষুধার তাড়নায় এক পর্যায়ে গাছের পাতা এবং জীব-জন্তুর চামড়া খেতে বাধ্য হয়েছিল। ক্ষুধার তাড়নায় প্রায়ই শিশু ও মহিলাদের ক্রন্দন শুনা যেত।
কাজেই একথা স্পষ্ট দাওয়াতি কাজে বাঁধা ছিলো, আছে, এবং আসবেই। কারন হচ্ছে মুসলিম দেশে বসবাসকারী মানুষদের ইসলামের প্রতি উদাসীনতা এবং অমুসলিম দেশের জনগন ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। তাই দাঈ কে যথেষ্ট সতর্কতা, হিকমাহ ও প্রজ্ঞার সাথে দাওয়াতি কাজ করতে হয়। ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনে উন্নত আমলের মাধ্যমে নিজে সত্যের সাক্ষ্য হিসাবে জনগনের সামনে উপস্থাপন করা জরুরী। ইসলামী জ্ঞান ও সহীহ আমল ছাড়া দাওয়াতি কাজ করতে গেলে হিতের বিপরীত হওয়া সম্ভাবনা থাকে।
কথা ও কাজে মিল : মুসলিম প্রধান দেশ গুলোতে দেখা যায় দ্বীনের দাঈদের কাতারে এমন কিছু মানুষের আগমন হয়। যাদের কথা ও কাজের পুরোপুরি মিল পাওয়া যায় না। যার কারনে সাধারণ মানুষ ইসলামের পতাকাতলে সমবেত না হয়ে দুরে চলে যায়। এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের অনেকে এটাকে রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগায় -এতে করে প্রকৃত দাঈদের কাজও বাধাপ্রাপ্ত হয়। যারা ইসলামের নুরকে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন তাদেরকে অবশ্যই কথা ও কাজের শতভাগ মিল রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ বলেন :
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْن
كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللّٰهِ اَنْ تَقُوْلُوْا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ
হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।
আস-সফ, আয়াত: ২,৩
সামাজিক বাধা :দুনিয়ার কোথায়ও তাওহীদের দাওয়াত সহজে গ্রহণ করেছে এমন নজির নেই। আল্লাহর নবীদের থেকে শুরু করে বর্তমান সমাজের দাঈ ইলাল্লাহদের দাওয়াতে বাধসাধে সমাজের লোকজন ও সমাজপতিরা।
ইসলামী খেলাফতের পর মুসলিম খেলাফত সর্বশেষ বিলুপ্তি হয়ে যায় ১৯২৪ সালে তুর্কী থেকে। যাকে আমরা ওসমানীয় খেলাফত বলি। অটম্যান বা ওসমানীয় খেলাফতের পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য যারা কাজ শুরু করেছেন। তাদের সকলেরই প্রায় একই পরিণতি হয়েছে। তুর্কীর সাইয়েদ বদিউজ্জামান নুরসিহ, মিশরের শহীদ হাসান আল বান্না, সাইয়েদ কুতুব শহীদ, সাউথ এশিয়ার সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহ), শহীদ আব্দুল মালেক,বাংলাদেশের শহীদ মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুল কাদের মোল্লা সহ অসংখ্য দাঈদের সাথে সমাজপতির আচরণ এক ও অভিন্ন ছিল।
সমাজপতিরা আল্লাহর নবীদের সাথে কেমন আচরণ করেছেন তা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বর্ননা করেছেন:-
وَ اِنِّیْ كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوْۤا اَصَابِعَهُمْ فِیْۤ اٰذَانِهِمْ وَ اسْتَغْشَوْا ثِیَابَهُمْ وَ اَصَرُّوْا وَ اسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًاۚ
তুমি যাতে তাদের ক্ষমা করে দাও এ উদ্দেশ্যে আমি যখনই তাদের আহবান করেছি তখনই তারা কানে আঙুল দিয়েছে, এবং কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে, নিজেদের আচরণে অনড় থেকেছে এবং অতিমাত্রায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে।(৭১: ৭)
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا فِیْ قَرْیَةٍ مِّنْ نَّذِیْرٍ اِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَاۤ١ۙ اِنَّا بِمَاۤ اُرْسِلْتُمْ بِهٖ كٰفِرُوْنَ
কখনো এমনটি ঘটেনি যে, আমি কোন জনপদে কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি এবং সেই জনপদের সমৃদ্ধিশালী লোকেরা একথা বলেনি যে, তোমরা যে বক্তব্য নিয়ে এসেছ আমরা তা মানি না। (৩৪; ৩৪)
সকল বাধাকে উপেক্ষা করে। যারা দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত মানুষের কর্ণকুহরে পৌঁছে দিতে চায়। তাদের উপর নেমে আসতে পারে জুলুম, নির্যাতন।
জুলুম, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও শাহাদাত :
আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা ও পথহারা দিকবিদিক ছুটে চলা মানুষদেরকে সত্য ও সুন্দরের পথে আহবানকারীদের উপর জুলুম নির্যাতন এবং কি প্রান বিনাশের হুমকিও রয়েছে। আম্বিয়া আলাইহিসসালামদের উপরেও এমন হয়েছিল। পবিত্র কুরআনের সুরা ইয়াসীনে ২০-২৭ নং আয়াতে এমন একটি বর্ণনা রয়েছে -আল্লাহ বলেন :
وَجَاءَ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ () اتَّبِعُوا مَنْ لَا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُمْ مُهْتَدُونَ ()
وَمَا لِيَ لَا أَعْبُدُ الَّذِي فَطَرَنِي وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ () أَأَتَّخِذُ مِنْ دُونِهِ آَلِهَةً إِنْ يُرِدْنِ الرَّحْمَنُ بِضُرٍّ لَا تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلَا يُنْقِذُونِ () إِنِّي إِذًا لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ()
إِنِّي آَمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ ) قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ () بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ ()
“অতঃপর শহরের শেষ প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল (এবং) বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা (আল্লাহর) রাসূলগণকে অনুসরণ কর।”
“তাদের অনুসরণ কর, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।”
“কেন আমি তাঁর এবাদত করব না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা সবাই প্রত্যাবর্তিত হবে?”
“আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব, করুণাময় (আল্লাহ) যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে যাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং যারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না?”
“এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব।”
“আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব আমার বক্তব্য শুনে নাও।”
“(শেষ পর্যন্ত তাকে শহীদ করা হলো এবং) তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোনক্রমে জানতে পারত-”
“যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”
দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবায়ে আজমাইন গনও অসহনীয় নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। ইসলামের প্রথম শহীদ হযরতে সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রাঃ)কে আরবের কুরাইশ নেতা আবু জাহল নিজ হাতে একটি বর্শা দিয়ে হত্যা করে।
হযরতে আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) কে কুরাইশরা মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে ফেলে পুড়িয়ে মারত।
ইয়াসির ইবনে আমির (রাঃ), বিলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ),
খুবাইব ইবনে আদী (রাঃ),সাঈদ ইবনে জুবাইর (রহঃ),মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ) দের উপর নির্যাতন ছিল সে সময়ের সর্বোচ্চ বর্বরতা। জুলুমে অতিষ্ঠ হযরতে খাব্বাব ইবনে আরাত (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে গিয়ে নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দোয়া কামনা করলে রাসুল সাঃ বলেন :
عَنْ خَبَّابِ بْنِ الأَرَتِّ، قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِي ظِلِّ الكَعْبَةِ فَقُلْنَا: أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلاَ تَدْعُو لَنَا؟ فَقَالَ: «قَدْ كَانَ مَنْ قَبْلَكُمْ، يُؤْخَذُ الرَّجُلُ فَيُحْفَرُ لَهُ فِي الأَرْضِ، فَيُجْعَلُ فِيهَا، فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُجْعَلُ نِصْفَيْنِ، وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الحَدِيدِ، مَا دُونَ لَحْمِهِ وَعَظْمِهِ، فَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَاللَّهِ لَيَتِمَّنَّ هَذَا الأَمْرُ، حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ، لاَ يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ، وَالذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ، وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُونَ
খাব্বাব ইবনে আরাত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে কোন বিষয়ে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি কাবা ঘরের ছায়ায় তাঁর চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, আমাদের জন্য কি সাহায্য কামনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না? তিনি বললেনঃ তোমাদের পূর্বেকার লোকদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিল যাকে ধরে নিয়ে তার জন্য যমীনে গর্ত করা হতো। তারপর করাত এনে মাথায় আঘাত হেনে দুই টুকরা করে ফেলা হত। লোহার শলাকা দিয়ে তার গোশত ও হাড্ডি খসানো হত। এতদসত্ত্বেও তাকে তার দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারত না। আল্লাহর কসম! এ দ্বীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। এমন হবে যে, সানআ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত ভ্রমণকারী ভ্রমণ করবে, অথচ সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে না এবং নিজের মেষপালের জন্য বাঘের ভয় থাকবে না, কিন্তু তোমরা তো তাড়াহুড়া করছ।( হাদিস)
গত শতাব্দীতে মিশরের ইখওয়ান কর্মী জয়নব আল গাজ্জালীর উপর জামাল আব্দুন নাসেরের বর্ববরতা, বর্তমান শতাব্দীর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের উপর শেখ হাসিনার পৈশাচিক নির্যাতন ও হত্যা। এটাই প্রমান করে যে দ্বীনের দাঈদের জুলুম আসবেই। যারা শত জুলুমের পারেও এ কাজ অব্যাহত রাখবে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার অবধারিত।
হিজরত বা নির্বাসন : আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহবান করাকে কায়েমি স্বার্থবাদীরা কখনো মেনে নেয়নি আর সহজে মেনে নিবেওনা। তাই দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণকারীদের নানান ভাবে ভয়ভীতি দেখানো,হত্যার চেষ্টা করার পরও যদি একাজ অব্যাহত রাখে। তবে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে অথবা নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়।
আব্বাসীয় খেলাফত কালে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)কে গ্রেফতার, শারীরিক নির্যাতন, গৃহবন্দী ও নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ইসলামী শাসন ও সামাজিক ইনসাফের পক্ষে “মা’আলিম ফিত তারীক” বই লেখার কারনে সাঈদ কুতুব (মিসর) কে নির্বাসন ও পরবর্তীতে হত্যা করা হয়।
ইমাম নওয়াব সিরকার (ভারত) কে দাওয়াতি কাজের কারনে ব্রিটিশরা গৃহবন্দী ও নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়।
সাইয়্যেদ বদিউজ্জামান নূরসী(তুর্কী) কে দীর্ঘ দিন নির্বাসনে থাকতে হয়। অতএব পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত শির্কী মতাদর্শে উপরে চলমান সমাজকে বদলে দিতে দ্বীনে দাঈদের জন্য এ সকল বাধা স্বাভাবিক। তাইতো এ কাজে হিকমত অবলম্বনের কথা মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন:
ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ –
তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন”। [সূরা: আন-নাহাল: ১২৫]
বই – দাঈ ও সংগঠক- লেখক আবু নাঈম মু শহীদুল্লাহ্