২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাত ৯:২৭
২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাত ৯:২৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসপাড়ে ঐতিহ্যের বান্নি

Share Option;

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
তিতাসের তীরে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর যেন পরিণত হয়েছে এক বর্ণিল জনপদে। গঙ্গাস্নান উপলক্ষে বসেছে শতবর্ষের ঐতিহ্য বহন করা ‘বান্নি’ মেলা—লোকায়ত সংস্কৃতির এক আলোকিত আয়োজন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে বৈরি আবহাওয়ার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে মেলার সূচনা হয়। গগনভেদী মেঘলা আকাশের নিচে, মাটি ছুঁয়ে যাওয়া নদীর জলে মিলেমিশে যেন মানুষের ভক্তি আর ঐতিহ্যের গান। স্থানীয় ভাষায় ‘বান্নি’ নামে পরিচিত এই মেলাকে ঘিরে চারদিক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ, গন্ধ আর শব্দের ঢেউ।

মেলায় বসেছে দেশীয় পদের বাহার—নারু, তিল্লাই, বাতাসা, কদমা, জাম মিষ্টি, মন্ডা-মিঠাই, আর গুড়ে ভাজা ঘ্রাণে মোড়া জিলাপি। খাবারের ঘ্রাণ আর হাটের কোলাহলে ঘুরে বেড়ায় শহরের মানুষ, গ্রাম্য পরিবার, শিশু-কিশোরের দল। পাশাপাশি রয়েছে তিন শতাধিক দোকানে মাটির তৈরি খেলনা আর শৌখিন তৈজসপত্র, যেন গ্রামীণ জীবনের শিল্পচর্চার ছোট ছোট নিদর্শন।

সকালের বৃষ্টিতে মেলা কিছুটা নিরালার চাদরে ঢাকা থাকলেও, বেলা গড়াতেই জেগে ওঠে প্রাণ। গঙ্গাস্নানে অংশ নেওয়া সঞ্চিতা রানী বর্মণ বলেন, ‘অজানা-জানা পাপ মোচনের আশায় স্নান করেছি। গঙ্গা মায়ের পবিত্র জলে দেহ ও মন শুদ্ধ করে প্রার্থনা করেছি পরিবারের মঙ্গল ও দেশের শান্তির জন্য।’

মোহন লাল দাস জানালেন, ‘গঙ্গার জলে স্নান করলে রোগ-শোক দূর হয়, আর তর্পণের মাধ্যমে পূর্বপুরুষেরা মুক্তি পান—এই বিশ্বাসেই এসেছি। ভগবানের কাছে সকলের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছি।’

মাটির খেলনা নিয়ে আসা ব্যবসায়ী পবিত্র মোহন পাল যেন এই মেলার নিয়মিত এক চরিত্র। তার কণ্ঠে অনুরণিত হয় প্রত্যাশার সুর: ‘প্রতিবছর এই মেলার অপেক্ষায় থাকি। এবারও এসেছি, ক্রেতারাও ভালো আসছেন—বেচাকেনাও মন্দ নয়।’

খাবারের দোকানদার ফরিদ হোসেন জানান, ‘সকালে বৃষ্টির কারণে ক্রেতা কিছুটা কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে মেলা জমে উঠেছে।’

মেলার আয়োজক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়ের সাথে সাথে ‘বান্নি’ শুধু একটি মেলা নয়, হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের আত্মপরিচয়ের এক আলোকদ্যুতিময় অধ্যায়।


Share Option;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *