২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিকাল ৫:০৫
২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিকাল ৫:০৫

ম্যাগাজিন লোকজ রঙে (দাফনা)

Share Option;

লোকজ রঙে দাফনা
শেখ একেএম জাকারিয়া

বাংলা সাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিন বা ছোট কাগজের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। মূলধারার সাহিত্যপ্রবাহের বাইরে থেকেও এসব পত্রিকা নতুন ভাবনা, ভিন্ন স্বাদ এবং উদীয়মান লেখকদের পরিচর্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই ধারারই অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে সাহিত্যপত্র ‘দাফনা’। ২০২৫ সালের মার্চ সংখ্যাটি নান্দনিক প্রচ্ছদ ও চিন্তাশীল রচনার সমন্বয়ে ইতোমধ্যে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

‘দাফনা’ নামটিই একেবারে ব্যতিক্রমী। সম্পাদক ফারুকুর রহমান চৌধুরীর ভাষায়, বাংলা বানান-অভিধানে এই শব্দটি নেই। এটি হাওরাঞ্চলের একটি আঞ্চলিক শব্দ, যার ব্যবহার এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এই শব্দের শিকড় ও এর সঙ্গে জড়িত সাংস্কৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতেই তিনি এটি লিটল ম্যাগাজিনের নাম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এতে লোকজ সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

পত্রিকাটির সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ইতালি প্রবাসী মু. সামছুজ্জামান লিকছন, সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদ গণপাঠাগারের সভাপতি কবি শেখ একেএম জাকারিয়া এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দাস। প্রকাশনার দায়িত্বে ছিল তৃণলতা প্রকাশ, বঙ্গবাজার, ঢাকা। মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছে আল-কাদের অফসেট প্রেস, ঢাকা থেকে। সম্পাদনা ও প্রকাশনায় সার্বিক সহযোগিতা করেছে এভারগ্রীন মুক্ত যুব সংঘ, দিরাই। প্রচ্ছদশিল্পী জাহাঙ্গীর আলম, সবুজ ও সাদার মিশ্রণে তৈরি করেছেন এক দৃষ্টিনন্দন বৈশাখী প্রচ্ছদ, যা প্রথম দেখাতেই পাঠকের মন কেড়ে নেয়।

এই সংখ্যায় অল্পসংখ্যক অথচ বাছাইকৃত লেখকের মননশীল রচনা প্রকাশিত হয়েছে।আলী আহাম্মদ খান আইয়োবের প্রবন্ধ “আদি গারো সমাজ”-এ গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে গারো জাতিসত্তার ইতিহাস ও সংস্কৃতি। মোহাম্মদ সুবাস উদ্দিনের প্রবন্ধ “লোকছড়া: কৃষকসমাজের দশদিগন্ত”-এ তুলে ধরা হয়েছে কৃষকজীবনের সঙ্গে মিশে থাকা লোকছড়ার নানা দিক।

এস.ডি. সুব্রত “বাংলা কবিতার রাজকুমার হেলাল হাফিজ” শিরোনামে একটি সুন্দর ও তথ্যবহুল নিবন্ধ লিখেছেন, যেখানে বাংলা কবিতায় হেলাল হাফিজের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। শেখ একেএম জাকারিয়া-র ছন্দ বিষয়ক প্রবন্ধ “ছন্দের ছায়ায় অনুভূতির সুর” ছন্দের রূপ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পাঠককে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিয়েছে।

এই সংখ্যার ছোটগল্পের মধ্যে ফারুকুর রহমান চৌধুরীর “সেদিন সন্ধ্যাবেলা” এবং সফিক নহোরের “কাকভোর” পাঠককে ভাবনার জগতে নিয়ে যেতে পেরেছে। আবু তালহা মনির লিখেছেন গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের জীবন ও কর্ম নিয়ে “নিভৃতে থাকা এক খ্যাতির নাম” শিরোনামের একটি তথ্যভিত্তিক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ নিবন্ধ। এছাড়া, মাসউদ আহমদের ভ্রমণভিত্তিক লেখা “উগান্ডা থেকে বলছি”-তে সাবলীল ভাষায় উঠে এসেছে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার গল্প।

এছাড়া ছড়া, কবিতা ও নানা স্বাদের লেখার সমন্বয়ে ‘দাফনা’ হয়ে উঠেছে একটি পূর্ণাঙ্গ সাহিত্যপত্র। ভাষার মাধুর্য, সংস্কৃতির টান এবং গভীর ভাবনার কারণে এটি ধীরে ধীরে হাওরাঞ্চলের সাহিত্যপ্রেমীদের প্রিয় সঙ্গী হয়ে উঠছে।

‘দাফনা’ শুধু একটি ছোট কাগজ নয়—এটি হাওরের গল্পে গড়া এক ভিন্নধর্মী সাহিত্যভুবন, যা লোকজ শব্দ আর সংস্কৃতিকে নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছে। এর সম্পাদকমণ্ডলী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা—তাদের এই যাত্রা যেন আরও দূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়, আর সাহিত্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আরও গভীরভাবে।


Share Option;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *