২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিকাল ৪:৫৪
২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিকাল ৪:৫৪

দাওয়াতি কাজের কৌশল ও দাঈর গুনাবলী -আবুু নাঈম মু শহীদুল্লাহ্

Share Option;

ইসলামের সুমাহান আদর্শের দিকে মানুষকে আহবান করা এটা কোন নফল বা মোবাহ কাজ নয়। যে মন চাইলে দাওয়াতি কাজ করলাম আর মন চাইলোনা দাওয়াতি কাজ করলাম না। এ কাজ করার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে। মহান রাব্বুল ইজ্জত বলেনঃ
یٰۤاَیُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ مِنْ رَّبِّكَ١ؕ وَ اِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗ١ؕ وَ اللّٰهُ یَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْكٰفِرِیْنَ
হে রসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা মানুষের কাছে পৌঁছাও। যদি তুমি এমনটি না করো তাহলে তোমার দ্বারা তার রিসালাতের হক আদায় হবে না। মানুষের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমাকে আল্লাহ‌ রক্ষা করবেন। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তিনি কখনো কাফেরদেরকে (তোমার মোকাবিলায়) সফলতার পথ দেখাবেন না। (আল-মায়িদাহ : ৬৭)
অথচ এ কাজকে অনেকে গৌন মনে করেন। অনেকেই নামাজ রোজার সহ বেশকিছু ভালকাজ করে থাকেন। কিন্তু সমাজ জীবনে মানুষের তৈরী মতবাদ লালন পালন করে থাকেন। তাদের বিষয় স্বয়ং রাসূল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষদেরকে ডাকে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের একটি অংশ। প্রশ্ন করা হলো সে যদি নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে। জবাবে রাসূল বলেন যদি সে নামাজ পড়ে রোজা রাখে এবং বলে আমি একজন মুসলমান তবুও তার জন্য জাহান্নামের অংশ রয়েছে। – (মুসলিম)
দাওয়াতে দ্বীনের কাজের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম এতোই সিরিয়াস ছিলেন যে- নিজ বাড়ী-ঘর, ধন-সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজনের মমতার বন্ধন ছেড়ে কুফুরীতে নিমজ্জিত মানুষদেরকে আলোর দিকে আহবান করতে বেরিয়ে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সোয়া লক্ষ সাহাবীর প্রায় লক্ষাধিক সাহাবীর কবর মক্কা মদিনার বাহিরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত। অথচ মাসজিদে নববী ও মাক্কাতুল মোকাররামাতে সালাত আদায় করার সাওয়াব সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম অবহিত ছিলেন। এতে বুঝা যায় দাওয়াতি মক্কা মদিনায় সালাত আদায়ের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ হচ্ছে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ। মহান আল্লাহ বলেন :

وَ مَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَى اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ

সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহ‌র দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান। (৪১: ৩৩)
তাগুতের বন্দেগী পরিহার করে আল্লাহ বন্দেগী করার দাওয়াত দানের জন্য যুগে যুগে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। দাওয়াত গ্রহণ না করে কুফরিতে ডুবে থাকা লোকদের পরিনাম কি হয়েছিল তার নিদর্শন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আজও দৃশ্যমান। পবিত্র কুরআন আল্লাহ বলেন :

وَ لَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ اجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ١ۚ فَمِنْهُمْ مَّنْ هَدَى اللّٰهُ وَ مِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَیْهِ الضَّلٰلَةُ١ؕ فَسِیْرُوْا فِی الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَیْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِیْنَ

প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো।” এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ‌ সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর ওপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে। তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে। (১৬:৩৬)

আমাদের নবী সাইয়েদুল মুরসালিন মুহাম্মাদ (সাঃ) কে
আল্লাহ বলেন :
یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُۙ-قُمْ فَاَنْذِرْ۪ۙ-وَ رَبَّكَ فَكَبِّرْ۪ۙ

হে বস্ত্র মুড়ি দিয়ে শয়নকারী,ওঠো এবং সাবধান করে দাও,
তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, (৭৪: ১-৩)
বর্তমান সময়ে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ হাতের তালুতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ রাখা মত কঠিন। চার দিকে নাস্তিকদের
জয়জয়কার তার সাথে যোগ হয়েছে Artificial intelligence (AI)। যার কারনে দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে দাঈদের যথেষ্ট সতর্কতা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।

দাওয়াতি কাজের কৌশল :
দাঈ র দাওয়াত ব্যক্তিগত ভাবে হোক বা সামষ্টিক ভাবে
দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরী। নচেৎ দাওয়াতের ফলাফল জিরো (০)বা মাইনাস (-) এ পরিনত হবে। দাঈ ইলাল্লাহ র সরাসরি দাওয়াত, বক্তৃতা, লেখনী, বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, যে ভাবেই করুক না কেন। কিছু মৌলিক কৌশল অবলম্বন করে কাজ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

১.হিকমাহ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ : সমাজের সকল মানুষ এক রকম নয়। একটি সমাজে প্রভাবশালী যেমন বসবাস করে তেমনি নরম ও দূর্বল শ্রেণীর মানুষও বসবাস করে। পুরোপুরি ঈমানদার, আস্তিক কিন্তু শির্কী মনোভাব সম্পন্ন মানুষ যেমন আছে তেমনী নাস্তিক ও জাগতিক জ্ঞান সম্পন্ন মানুষও রয়েছে। সে জন্য দাঈ তার দাওয়াতি কাজে বুদ্ধিমত্তা ও হিকমত অবলম্বন করবেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
اُدْعُ اِلٰی سَبِیْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِیْلِهٖ وَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِیْنَ
অর্থঃ হে নবী, আপনার রবের পথে লোকদেরকে ডাকুন ‘হেকমত’ এবং মাওয়েযায়ে হাসানার মাধ্যমে। আর তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে হলে সুন্দরভাবে করুন। আপনার রবই বেশি জানেন যে, কে তাঁর পথ থেকে সরে আছে, আর কে সঠিক পথে আছে। (সূরা আন-নাহল:১২৫)

দাওয়াতি কাজ করার সময় প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের সাথে কথা বলা, পরিস্থিতি বুঝে সঠিক ভাষা ও কৌশল ব্যবহার করা দরকার।
২.সর্বোত্তম ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ:
দাওয়াতি (ইসলামের দিকে আহ্বান) কাজে সর্বোত্তম আচরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ কাজের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনা, যা সর্বোত্তম ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ ছাড়া সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহ সুরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন দাওয়াত দিতে হবে হিকমত, উত্তম উপদেশ ও ভদ্র বিতর্কের মাধ্যমে।
সুরা ত্ব হার ৪৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা মুসা আ: কে ফেরাউনের নিকট দাওয়াত উপস্থাপনের জন্য কোমল ব্যবহার করতে বলেছেন –
فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّیِّنًا لَّعَلَّهٗ یَتَذَكَّرُ اَوْ یَخْشٰى

তার সাথে কোমলভাবে কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে।”
সুন্দর আচরণ ও সদ্ব্যবহার মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলে।

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“কোনো কঠোরতা দাওয়াতের কাজকে সুন্দর করে না, আর কোনো কোমলতা এমন নেই যা বিষয়কে সুন্দর না করে।” (সহীহ মুসলিম)
উত্তম আচরণ দিয়ে মানুষের মন জয় করা খুবই সহজ। যা অনেক সময়ে আমরা ভুলে যাই।

৩.উন্নত আমল ও চারিত্রিক মাধুর্যের মাধ্যমে :
দাওয়াতে দ্বীনের দাঈ র চরিত্র যত সুন্দর হবে, মানুষ তত সহজে তার দাওয়াত কবুল করবে। পরিশুদ্ধ আমল ও চারিত্রিক মাধুর্যের মাধ্যমে দাওয়াত এতোটাই কার্যকরি যে একজন মানুষ দ্বীন গ্রহণ ও আমল করার পাশাপাশি দাঈর ভক্তে পরিনত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল, তার দয়া, সহনশীলতা, বিনয় – সব কিছুই মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করত। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আমি উত্তম চরিত্র সম্পন্ন করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।” (মুয়াত্তা মালিক, মুস্তাদরাক হাকিম)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন :
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ١ۚ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ١۪ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ١ۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ

(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করো। তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমার স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ‌ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।
(৩:১৫৯)

৪. সবর ও সহনশীলতা অবলম্বন কর:
দাওয়াতি কাজ করতে গেলে নানান রকমের বাঁধা ও কটুকথা শুনতে হয়। কটুকথা ও বাঁধার মুখোমুখি হয়েও দাঈকে সহনশীলতা দেখাতে হবে এবং সবর করতে হবে।
দাওয়াতি কাজে সফল হতে হলে ধৈর্য ও সহনশীলতা মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.), অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে দাওয়াত দিয়েছেন। করন দাওয়াতি কাজ মানুষকে হিদায়াতের পথে ডাকা, জোর করে পরিবর্তন আনা নয়। এজন্য সময় লাগে, ধৈর্য লাগে, আর সহনশীলতা ছাড়া কাউকে আন্তরিকভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। কুরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ ধৈর্য ধরার আদেশ দিয়েছেন, কেউ যদি উপহাস ঠাট্টা বিদ্রূপ করে তবে তাকে জবাব না দিয়ে তার থেকে একটু আলাদা হয়ে যাওয়া। কিন্তু দাওয়াতি লক্ষ ঠিক রাখা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
وَ اصْبِرْ عَلٰى مَا یَقُوْلُوْنَ وَ اهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِیْلًا

আর লোকেরা যা বলে বেড়াচ্ছে সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো এবং ভদ্রভাবে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাও। (৭৩: ১০)

وَ تَوَاصَوْا بِالْحَقِّ١ۙ۬ وَ تَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ۠
এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে। (১০৩: ৩) কাজেই হকের পথে মানুষকে আহবান করলে মানুষ প্রতিত্তোরে যাহাই বলুক না কেন ধৈর্য ও সহনশীলতা দেখাতে হবে।

৫.পরিকল্পিত ভাবে ও সহজ পদ্ধতিতে দাওয়াত : দাঈদের মধ্যে তাৎক্ষণিক দাওয়াত দেওয়ার মানসিকতা কাজ করে।
যার কারনে দেখা হওয়ার সাথে সাথে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ পদ্ধতিতে দাওয়াতের ফলাফল ভাল হয় না। অনেক সময়ে হিতের বিপরীত হয়ে থাকে। পরিকল্পিত ভাবে এবং দ্বীন মানার বিষয়ে সহজ করে বলতে হবে।
মানুষের মানসিকতা ও অবস্থান বুঝে দাওয়াতের বিষয় ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা। যাতে করে একজন মানুষ ইসলামকে সহজ ও কল্যানকর মনে করে। রাসূল (সা.) মুয়ায ইবনে জাবালকে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেছিলেন:
“তুমি প্রথমে তাদের আল্লাহর একত্বের দিকে দাওয়াত দেবে… তারপর যদি মানে, সালাত, যাকাত ইত্যাদি বলবে।” (বুখারী, ১৩৭৫)
তিনি আরো বলেন: “নিশ্চয়ই এই ধর্ম সহজ। কেউ যদি এতে কঠোর হতে চায়, তবে তা তাকে পরাজিত করবে। তাই মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।” — সহীহ বুখারী

৬. কুরআনিক গল্প, উদাহরণ উপস্থাপন : দাওয়াতি কাজে সরাসরি কুরআনের হুকুম না মানলে শাস্তির ভয়াবহ
বিধান সম্পর্কে আলোচনা না করে। কুরআনের চমৎকার চমৎকার গল্প ও উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ গোলামীর সুফল নিয়ে আলোচনা করা উচিত। হযরতে ইব্রাহীম (আঃ) ইউসুফ (আঃ) মুসা (আঃ) জাকারিয়া (আঃ) সহ অনেক নবী ও আসহাবে কাহফ এর গল্পের মাধ্যমে দাওয়াত উপস্থাপন করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

৭.স্রষ্টার অনুগ্রহ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দাওয়াত :মহান রবের অনুগ্রহ সমুহের বিষয় গুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া। সুস্থতার নেয়ামত,স্বচ্ছলতার নেয়ামত, শারীরিক স্বক্ষমতার নেয়ামত সমুহের শুকরিয়া আদায় এর জরুরত সম্পর্কে ধারনা দেওয়া।

৮.জন কল্যান মুলক কাজের :
ইসলামের সৌন্দর্য ও নৈতিকতা তুলে ধরেতে মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা ও বাসস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় দাঈদের অগ্রনী ভূমিকা রাখা দরকার।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন :-তোমরা যারা পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, আকাশের অধিপতি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।— (তিরমিযী, হাদীস: ১৯২৪)
তিনি আরো বলেন:তোমরা যদি কাউকে খাদ্য দাও, অভিবাদন করো, অসুস্থকে দেখতে যাও এবং মানুষের প্রয়োজন মেটাও — এসবই ঈমানের নিদর্শন।” — (বুখারী ও মুসলিম)

وَ لْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ یَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَیْرِ وَ یَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ١ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ

তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে।(৩:১০৪)
মানুষের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলে উপকৃত ব্যক্তি আপনার ভক্তে পরিনত হয়ে যাবে। এতে করে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করতে সহজ হয়ে যায়। এছাড়াও স্থান ও পরিবেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।

দাঈর গুণাবলী :
মানুষদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের মধ্যে থেকে স্পেশালী কিছু লোক দ্বীনের দাঈ হিসাবে কাজ করে যাবে। যেমনীভাবে প্রতিরক্ষা, চিকিৎসার,জন্য আলাদা দল থাকে তেমনি দাওয়াতে দ্বীনের কাজেও স্পেশাল একটা টীম থাকবে যারা প্রতিরক্ষা বাহিনী ও চিকিৎসকদের মত স্পেশাল কিছু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সঠিক ভাবে কাজ করে যাবে।

وَ مَا كَانَ الْمُؤْمِنُوْنَ لِیَنْفِرُوْا كَآفَّةً١ؕ فَلَوْ لَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّیَتَفَقَّهُوْا فِی الدِّیْنِ وَ لِیُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْۤا اِلَیْهِمْ لَعَلَّهُمْ یَحْذَرُوْنَ۠

আর মুমিনদের সবার এক সাথে বের হয়ে পড়ার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু তাদের জনবসতির প্রত্যেক অংশের কিছু লোক বেরিয়ে এলে ভাল হতো। তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতো এবং ফিরে গিয়ে নিজের এলাকার লোকদের কে সতর্ক করতো, যাতে তারা অসদাচরণ থেকে বিরত হয়।” (সূরা তাওবাহ, আয়াত-১২২)

কুরআনের এ আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে দ্বীনের দাঈদের দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। এবং দ্বীনি জ্ঞানের পাশাপাশি কিছু চারিত্রিক গুণাবলিও অর্জন করা দরকার। শুধু মাত্র বক্তব্য বা ওয়াজ নসিহা দিয়ে মানুষকে আহবান করলে যে ফলাফল আসবে। তার চাইতে বেশী ফল পাওয়া যাবে চারিত্রিক মাধুর্যতা সম্পন্ন দাঈর সাক্ষাৎ বা সোহবতের মাধ্যমে দাওয়াতে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষ দ্বীনমুখি হওয়ার পরিবর্তে ক্রমেই দ্বীন থেকে দুরে সরে যাচ্ছে শুধুমাত্র দাঈদের অযোগ্যতা, অসততা ও চারিত্রিক ত্রুটির কারণে।

দ্বীনি পাণ্ডিত্যের পাশাপাশি দাঈর বেশ কিছু চারিত্রিক গুণাবলী থাকা আবশ্যক। এ অংশে আমি তা তুলে ধরছি –

১. দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও বাতিলের চ্যালেন্জ মোকাবেলায় পারদর্শী : পৃথিবীর মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ এক জীবন ব্যবস্থার নাম হচ্ছে ইসলাম। ইসলামকে সকল ধর্মের চাইতে সেরা প্রমাণ করার পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন এবং স্থান ও পরিবেশ বুঝে তা প্রয়োগ করার যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। যার জন্য দাঈকে কুরআন, হাদীস, ফিকহ ও তুলনা মুলক ধর্মতত্ত্বের জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাপক অধ্যায়ন করা দরকার। পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের প্রথম দাঈ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কে আল্লাহ ‘ইকরা’ বা ‘পড়ার নির্দেশ দিয়ে ওহি দেওয়া আরম্ভ করেছিলেন। শুধু আমাদের নবী নয় বরং আল্লাহ তার সকল নবীগণকে প্রথমেই ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শী হওয়া এবং পরে দাওয়াতী কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, হযরত ইউসুফ (আ.) এর ব্যপারে আল্লাহ বলেন :

قُلْ هٰذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللهِ- عَلٰى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ-

-বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর পথে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি ও আমার অনুসারীরা, স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে। (সূরা ইউসুফ, আয়াত-১০৮)
এজন্য দ্বীনের দাঈদের ইসলামের যথাযথ জ্ঞান অর্জন আবশ্যক। তা না হলে জনগনের কাছে ভুল তথ্য বা গোঁজামিল মুলক বক্তব্য যাবে। ভুল তথ্যের কারনে মানুষ বিভ্রান্ত হবে বাতিলরা এ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে।
তাই দাওয়াতে দ্বীনের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিকে বাতিলের চ্যালেন্জ মোকাবিলার বিষয়টি মাথায় রেখে কথা বলতে হবে।
২. চারিত্রিক মাধুর্যতা:
প্রতিটি মানুষের চরিত্রে দুটি দিক, ভালো ও মন্দ। একজন দাঈর জন্য চরিত্রের ভালো দিকগুলো অনুশীলন করা অপরিহার্য। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দাঈ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন মহান চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ বলেন :

وَ اِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِیْمٍ
নিঃসন্দেহে তুমি নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।(সূরা কলম, আয়াত-৪)।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি। আর তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই উত্তম যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট।” (বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৯)
দাঈর ব্যক্তি জীবনে সততা,নম্রতা,সহানুভূতি ও সহনশীলতা,উদারতা,আত্মসংযম,দয়া ও ক্ষমাশীলতা সম্পন্ন হওয়া দরকার। যাতে কোন মানুষ তার সোহবত পেলে নিজকে ধন্য মনে করে।

৩. ধৈর্য ও অবিচলতা:
যে কোন কাজের সফলতার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ও অবিচলতা। তাই দাঈদের ধৈর্যশীল হওয়া অপরিহার্য।
পৃথিবীর কোন জাতী-ই তাওহীদের দাওয়াত সহজে গ্রহণ করেনি। তাওহীদের দাওয়াতের বিরোধিতা করেছে দাঈদের নানাভাবে অত্যাচার করেছে এমনকি হত্যাও করেছে । হযরতে
নূহ (আ.) সালিহ (আ.), ইবরাহীম (আ.), মূসা (আ.), শুআয়ব (আ.), ইলিয়াস (আ.), ঈসা (আ.) এবং শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত যুলম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শত জুলুমের পরেও উনারা ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে দাওয়াতি কাজ আব্যাহত রেখেছেন। যার বর্ণনা পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন :-

اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَ لَمَّا یَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِیْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ١ؕ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلْزِلُوْا حَتّٰى یَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مَعَهٗ مَتٰى نَصْرُ اللّٰهِ١ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصْرَ اللّٰهِ قَرِیْبٌ

তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি। তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহ‌র সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদেরকে এই বলে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল, অবশ্যই আল্লাহ‌র সাহায্য নিকটেই।
(২: ২১৪)
অতএব বর্তমান যুগের দাঈগন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।

৪. তাকওয়া ও ইখ্লাস:
দাওয়াতে দ্বীনের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তির কাজের বারাকাহ নির্ভর করে তার খুলুুসিয়াতের উপর। আল্লাহ ভীতি ও খুলুসিয়াত ছাড়া দাওয়াতি মিশন সফল হওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম।দুনিয়াতে তাৎক্ষনিক কিছু সফলতা দেখা গেলেও পরকালীন ফলাফল খুবই হতাশা জনক। হাদীসে এসেছে –
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের সবার আগে যাদের বিচারের জন্য আনা হবে— তাদের মধ্যে অন্যতম দানবীর, আলেম ও আল্লাহর পথে জিহাদকারী শহীদ। আল্লাহ তাআলা প্রথমে শহীদকে নেয়ামতগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করবেন, ‘এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কী করেছো?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমি আপনার পথে লড়াই করে শহীদ হয়েছি।’ তখন আল্লাহ বলবেন : ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি শহীদ হয়েছো— লোকে যাতে তোমাকে বীর-বাহাদুর বলে। তুমি সেটি দুনিয়ায় পেয়ে গেছো। সে কারণে এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।’ তখন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর একজন দানবীরকে উপস্থিত করে করা হবে। তাকে দেওয়া সম্পদ দেখিয়ে আল্লাহ বলবেন, ‘এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কী করেছো?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমি আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ সম্পদগুলো আপনার পথে ব্যয় করেছি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি দান করেছো যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। তুমি সেটি দুনিয়ায় পেয়ে গেছো। সে কারণে এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।’ তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এবার একজন আলেমকে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা আলেমকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তোমাকে আমি যে জ্ঞান দিয়েছিলাম— সেটি তুমি কোন পথে ব্যয় করেছো?’ তখন সে বলবে, ‘আমি আপনাকে খুশি করার জন্য সে জ্ঞান অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি এসব জ্ঞান অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছো— যাতে লোকেরা তোমার প্রশংসা করে এবং তোমাকে প্রাধান্য দেয়। সেটি তুমি দুনিয়ায় পেয়ে গেছো। তাই এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।’ এরপর তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮২)
অতএব আল্লাহ দ্বীনের কাজ খুলুসিয়াতের সাথে কর আবশ্যক। আল্লাহ বলেন :-

وَ مَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِیَعْبُدُوا اللّٰهَ مُخْلِصِیْنَ لَهُ الدِّیْنَ١ۙ۬ حُنَفَآءَ وَ یُقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ یُؤْتُوا الزَّكٰوةَ وَ ذٰلِكَ دِیْنُ الْقَیِّمَةِؕ

তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন।(৯৫:৫)
৫. বিনয় ও নম্রতা:
দাওয়াতের অন্যতম কৌশল দাওয়াতী কার্যক্রমে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করা। কুরআনের একাধিক আয়াতে বিনয় অবলম্বনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লহ বলেন,
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لاَنْفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ

-(হে রাসূল সাঃ) আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলেন। তা না হয়ে আপনি যদি তাদের প্রতি রূঢ় ও কঠোর হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার আশপাশ হতে সরে পড়তো। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। (পরামর্শ শেষে) আপনি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। যারা (আল্লাহর উপর) ভরসা রাখে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৫৯)
দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর বাণী পৌঁছানো। আর মানুষ সব সময়ে নম্র ও বিনয়ী লোককে পছন্দ করে, তাই দাঈদের নম্র ও বিনয় হওয়া আবশ্যক নয় তবে গুরুত্বপূর্ণ । বিনয় মানুষকে আর্কষনীয় করে তুলে এবং আল্লাহ তা’য়ালাও বিনয়ীদের পছন্দ করেন। দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে দ্বীন প্রচার ও দ্বীনি কাজের সম্প্রসারণ একটি ইবাদত। তাই এ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টিই কামনাকারদের এ গুনের অধিকারী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ।

৬. মার্জিত শব্দ ব্যবহার করা
দাওয়াতের ক্ষেত্রে দাঈর ভাষাগত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দাঈর উচিত মাতৃভাষায় মার্জিত শব্দে সুস্পষ্ট ও সহজভাবে দাওয়াত উপস্থাপন করা।
মহানবী (সাঃ) ধীরে-সুস্থে উপদেশ দিতেন। এতই ধীরে যে, ইচ্ছে করলে কেউ তাঁর প্রতিটি কথা গণনা করতে পারতেন (সহীহ বুখারী)। কুরআনে বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে কথা বলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হযরত লুকমান (আ) তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়েছেন,

وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ
-কথা বল নিচুস্বরে। জেনে রেখ, নিশ্চয় গাধার কণ্ঠই সবচেয়ে অপ্রিয়। (সূরা লুকমান, আয়াত-১৯)

৭.সর্বাবস্থায় ক্রোধ সংবরণ করা:
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মু’মিনদের গুণাবলি বর্ণনা করে বলেন,
الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ١ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَۚ

যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ‌ অত্যন্ত ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৪)
ক্রোধ সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বিনষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। একটা সমাজে নানা ধর্ম, চিন্তা ও মতের মানুষ বসবাস করে। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ধর্ম, চিন্তা ও মতকে সঠিক ও সর্বোত্তম বলে মনে করে। এক্ষেত্রে সকল দাঈর কর্তব্য ভিন্ন মত বা ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভতিশীল থাকা। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে ইসলাম প্রচারে বিরোধিতা করা হলেও সহিষ্ণু আচরণ করা।
৮.ত্যাগের মানসিকতা
ত্যাগ ও কুরবানীর সর্বোচ্চ নজরানা পেশ করার মানসিকতা রাখা। হযরত নূহ (আ.) ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে দিন-রাত মানুষের কাছে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করেছেন। যার বর্ণনা কুরআন এসেছে
قَالَ رَبِّ اِنِّیْ دَعَوْتُ قَوْمِیْ لَیْلًا وَّ نَهَارًاۙ- فَلَمْ یَزِدْهُمْ دُعَآءِیْۤ اِلَّا فِرَارًا
সে (নূহ)বললোঃ হে আমার বর, আমি আমার কওমের লোকদের রাত-দিন আহবান করেছি। কিন্তু আমার আহবান তাদের দূরে সরে যাওয়াকে কেবল বাড়িয়েই তুলেছে। (সূরা নূহ, আয়াত-৫,৬)
আমাদের নবী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম এর ত্যাগ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দাঈদের ত্যাগ এ কথাই বলে দেয় যে দ্বীনের কাজে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার মানসিকতা নিয়ে পথ চলতে হয়।
৯. অশ্লীল, অশোভন ও অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকা
১০.গীবত চর্চা না করা
১১. সহজ, সাবলীল ভাষায় দাওয়াত দেওয়া
১২. ব্যক্তিগত জীবনে আলমে সলেহ এর প্রতি যত্নবান হওয়া।
১৩. অসত্য গল্প বা বানোয়াট বক্তব্য থেকে দুরে থাকা।
১৪.বিতর্ক তৈরী হয় এমন কাজ থেকে দুরে থাকা।
১৫. ইলম ও জনপ্রিয়তার কারনে অহংকার না করা।

——- চলবে—
বই – দাঈ ও সংগঠক


Share Option;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *