বুক রিভিউ: শেখ একেএম জাকারিয়া
‘অদৃশ্য কথোপকথন’শিরোনামটিই যেন পাঠকের মনে এক গভীর জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দেয়। কে কথা বলছে? কাকে বলছে? এবং কেনই বা তা অদৃশ্য? এমন এক রহস্যময় ও দার্শনিক আবহে মোড়ানো এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠককে টেনে নেয় সূচনালগ্নেই। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন খ্যাতিমান শিল্পী ধ্রুব এষ, যা রহস্য ও বিমূর্ততার এমন এক আবহ তৈরি করে, যা সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না, বরং উপলব্ধি করতে হয়।
মহসিন কবির-এর লেখা এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়, পাপড়ি পাবলিকেশন, তালতলা, সিলেট থেকে। বইটির মূল্য ২৮০ টাকা। মোট ৮০ পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে ৭৯টি কবিতা।
প্রথম কবিতা ‘দ্রোহী’, যেখানে কবি নিজেকে চিহ্নিত করেছেন হাওরপাড়ের সন্তান হিসেবে। কবিতার শুরুতে রয়েছে পাখির কলতানে জেগে ওঠা হাওরের মানুষের চিত্র, আর শেষ স্তবকে উঠে এসেছে তাঁর
আত্মপরিচয়,
“আমি মজলুমের হাতিয়ার,
গণজাগরণের জাগরণী গান।
আমি নশ্বর পৃথিবীতে চালাই,
অবিনশ্বর সাম্যের বয়ান।”
এই কবিতায় যেমন রয়েছে প্রতিবাদের ভাষা, তেমনি রয়েছে ন্যায়ের পথে অটল থাকার প্রতিশ্রুতি।
বইয়ের শেষ কবিতা ‘অদৃশ্য কথোপকথন’, নামের সঙ্গেই সমার্থক। সেখানে কবি যেন মানবজাতির পক্ষ হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রার্থনায় রত। জীবকুলের জন্য হেদায়েত কামনা করে কবি তুলে ধরেছেন এক বিশ্বজনীন প্রার্থনা, যা আধুনিক কবিতায় বিরল।
মহসিন কবিরের কবিতায় বাংলার প্রকৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক বৈষম্য এবং মানবিক মূল্যবোধের এক চমৎকার মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি অনুভবে যেন খুঁজে পাওয়া যায় একজন দায়বদ্ধ নাগরিকের আত্মপ্রকাশ, যিনি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন তাঁর মাটি, মানুষ ও মাতৃভূমিকে।
লেখক জন্মগ্রহণ করেন সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার নয়াহালট গ্রামে, ৬ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে। জামালগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি কলেজ ও জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি মানবতার কল্যাণে কাজ করার মনোভাব পোষণ করে চলেছেন। তাঁর পরিবার ছোট হলেও স্বপ্ন ও চিন্তার জগৎ বিশাল।
বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে সকল মানুষকে। যা নিঃসন্দেহে একটি বড়ো মানবিক অবস্থানের প্রকাশ। বইটির ছাপা হয়েছে পাপড়ি ছাপালয়, লালদিঘির পাড়, সিলেট থেকে। অনলাইন পরিবেশনায় রয়েছে রকমারি ডটকম ও পাপড়ি ডটকম।
‘অদৃশ্য কথোপকথন’ কেবল একটি কবিতার সংকলন নয়; এটি একটি দর্শন, একটি চিন্তা, এবং একটি প্রার্থনার ভাষ্য। সময়ের প্রতিবাদ ও মানবতার আহ্বানকে কবিতায় পরিণত করে, মহসিন কবির আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন এক মূল্যবান সাহিত্যিক সম্পদ। কবিতাপ্রেমীদের জন্য এই বইটি নিঃসন্দেহে এক অনন্য পাঠানন্দের উৎস হয়ে উঠবে।
