২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাত ১২:০৩
২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাত ১২:০৩

প্রখ্যাত জমিদার , মরমি কবি, বাউল সাধক,গীতিকার ও সুরকার দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

Share Option;

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

জীবনী

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর জন্ম মৃত্যু তারিখ:

জন্ম: ২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ (১২৬১ বঙ্গাব্দ)
মৃত্যু: ৬ ডিসেম্বর ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ (১৩২৯ বঙ্গাব্দ)
ক্ষেত্র: মরমী কবি, গীতিকার, সুরকার, জমিদার।
জন্মস্থান: বর্তমান সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলা এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার তেঘরিয়া (লক্ষণ শ্রী) এলাকায়।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর বংশ তালিকা:

রাজা বিজয় সিংহ,

রাজা অজিত সিংহ,

রাজা সুবিদ নারায়ন সিংহ,

রাজা ব্যথিত সিংহ,

শ্রী নাথ সিংহ,

রাজা অভিমন্যু সিংহ,

রাজা প্রতাপ সিংহ,

রাজা রনজিত সিংহ,

রাজা বানারসি রায় চৌধুরী

তিনি নবাব হইতে রায় চৌধুরী উপাধি লাভ করেন। তৎপূর্বে তাঁহারা কখনো স্বাধীন কখনো অর্ধস্বাধীন অবস্থায় কাল কাটাইতেন। এই সময় প্রকৃত পক্ষে তাঁহারা নবাবের অধীন হন। কাশীধামে জন্ম হয় বলিয়া তাঁহার নাম বানারসি রাখা হয়।

রাজা বাবু রায় চৌধুরী,

রাজা বাবু খান চৌধুরী,

বাবু রায় চৌধুরী ধর্মান্তারিত হইয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। মুসলীম হওয়ার পর নবাব সরকার কর্তৃক তিনি দেওয়ান উপাধি প্রাপ্ত হন।

দেওয়ান বাবু রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান কেশোয়ার রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান আলম রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান ওবেদুর রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান আনোয়ার রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী,

খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান হাছিনুর রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী,

দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর জমিদারির আওতাধীন পরগণা:

তাঁর জমিদারির অধীনে অনেকগুলো বড় পরগণা (তৎকালীন বৃহৎ প্রশাসনিক এলাকা) ছিল। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পরগণার নাম হলো-
​লক্ষণশ্রী,
​রামপাশা,
​কৌড়িয়া,
​মহারাম,
​অচিন্তপুর,
​লাউড়,
​পাগলা,
​পলাশ,
​বেতাল,
​চামতলা,
​কুরুয়া,
​এই পরগণাগুলো বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলা এবং সিলেট জেলার বিশ্বনাথ ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল।

★​দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর আন্তর্জাতিক সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত জমিদারির বিবরণ:

​অবিভক্ত বাংলার সময়কালে, হাসন রাজার জমিদারির কিছু অংশ তৎকালীন আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষকদের মতে, হাসন রাজার জমিদারি ভারতের বর্তমান আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার জফড়গড় পরগনাতেও বিস্তৃত ছিল।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর বিলাসময় জীবন:

বিশাল বিত্তবৈভব আর ভূসম্পত্তির উত্তরাধিকারী দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর বয়স যখন মাত্র ৬-৭ বছর, তখন তাঁর পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী মারা যান। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি বিশাল ভূ-সম্পত্তি এবং সিলেটের অন্যতম প্রভাবশালী জমিদারি লাভ করেন।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর ​ভোগবিলাসীতা:

যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শৌখিন ও বিলাসী রাজা। শিকার, ঘোড়দৌড়, হাতি পালন, নানা ধরনের পশু-পাখি পোষা এবং জমকালো প্রেমময় জীবনযাপনে তাঁর খ্যাতি ছিল, তাঁর প্রথম জীবনের গানে এই শৌখিনতা ও ভোগ-প্রবণতার ছাপ পাওয়া যায়।

★​দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর প্রথম জীবনে গান:

প্রেমময়ী জীবনের জোয়ার-ভাটার ক্রান্তিলগ্নের এই সময়েই তিনি গান লিখতে শুরু করেন, যা ছিল মূলত আত্ম-অনুসন্ধান ও জাগতিক প্রেম-বিলাসিতার মিশেলের বহিঃপ্রকাশ, যেমন- “সোনা বন্ধে আমারে দেওয়ানা বানাইল, না জানি কি মন্ত্র দিয়া পাগল বানাইল” গানটি তাঁর যৌবনের আবেগের এক অনন্য উদাহরণ।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর ​গানে আগমন:

দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম থাকলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত উচ্চ মার্গের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং আপাদমস্তক বিচক্ষণ ও সর্বেসর্বা জ্ঞানী লোক, তাঁর আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা ও কাব্যিক প্রকাশ ছিল অত্যন্ত সহজ সরল এবং তিনি ছিলেন পারস্য সাহিত্যের অনুরাগী, তাঁর কাব্যিক প্রতিভা ছিল সহজাত।

★​গীতিকার দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর গানে প্রবেশের প্রেরণা:

দেওয়ান হাসন রাজা প্রথম জীবনে যেসব গান লিখতেন, তাতেও এক ধরনের ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতি জিজ্ঞাসা ছিল, জমিদারির প্রাচুর্যের মধ্যেও তাঁর মন এক অজানা সত্যের সন্ধান করত, তাঁর গানগুলো ছিল তাঁর নিজস্ব “মরমী জার্নাল”।

★​সরকার দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর সহজ ভাষায় সুরারোপ:

তিনি লোকজ সুর ও আঞ্চলিক ভাষার সহজ প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর গভীর দর্শনকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, যা তাঁকে ‘বাউল কবি’ হিসেবে পরিচিতি দেয়।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর ​জীবনের মোড় পরিবর্তনে আধ্যাত্মিকতা:

​টার্নিং পয়েন্ট (ভূমিকম্প ও স্বপ্ন): ১৮৯৭ সালের এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাঁর বহু সম্পদহানি হয়। এই ঘটনা এবং লোকমুখে প্রচলিত তাঁর আধ্যাত্মিক স্বপ্ন-দর্শনের কাহিনী তাঁর জীবনে বড় পরিবর্তন আনে। তিনি বুঝতে পারেন, এই জাগতিক সম্পদ ক্ষণস্থায়ী।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর ​ত্যাগ ও বৈরাগ্য:

তিনি ভোগবিলাসী জীবন ত্যাগ করেন। শৌখিন জিনিসপত্র, হাতি-ঘোড়া সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন এবং সাধারণ জীবনযাপন শুরু করেন।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর ​জনকল্যাণ ও প্রজাপালনের দূরদর্শিতা:

শেষ জীবনে তিনি একজন দরবেশ ও প্রজাদরদী জমিদার হিসেবে পরিচিত হন, তিনি সাধারণ মানুষের সেবায় ও স্রষ্টার আরাধনায় আত্মনিয়োগ করেন।

★দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর ​মরমী দর্শনের গান:

এই সময়ের গানগুলো সম্পূর্ণভাবে স্রষ্টারপ্রেম, মানব-জীবনের অনিত্যতা, সৃষ্টি রহস্য এবং আত্ম-অনুসন্ধান নিয়ে রচিত। যেমন-
“লোকে বলে বলেরে, ঘরবাড়ি ভালা নাই আমার, কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যের মাজার” অথবা “মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়া রে, কান্দে হাসন রাজার মন ময়না রে” এই গানগুলোই তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে।

★গীতিকার, সুরকার, বাউল সাধক ও মরমি কবি দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর গানের ​স্থায়িত্ব:

দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর গানগুলো আজও বাংলা লোকসংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাঁর দর্শন ও সুর আজও উপমহাদেশের মরমী সাধকদের প্রেরণা যোগায়।

★উপসংহার:

দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গানের অবদান-

দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন, তাঁর গানের সংকলন হল ‘হাসন উদাস’ (১৯০৭) এবং ‘শৌখিন বাহার’।


Share Option;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *