১১ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাত ১১:৩৫
১১ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাত ১১:৩৫

কাশ্মীর : হিংসাত্মক দখলদারিত্ব ও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের মধ্যে: মাওলানা ফখরুল ইসলাম।

Share Option;

আবদুল ওয়াহিদ
(মুল ইংরেজি থেকে )
অনুবাদ : মাওলানা ফাখরুল ইসলাম,ইমাম ও খতিব হকওয়েল রিং মসজিদ লুটন,ইউকে।

কাশ্মীরের সংঘাত শুধু একটি ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি একটি মানবিক ট্র্যাজেডি। দশকের পর দশক ধরে এই অঞ্চলের মানুষ হিংসাত্মক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, একই সাথে গড়ে তুলেছে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের এক অনন্য সংস্কৃতি।
১. হিংসাত্মক দখলদারিত্বের বাস্তবতা
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকে কাশ্মীর একটি অমীমাংসিত ইস্যু। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFSPA- Armed Forces Special Powers Act) কাশ্মীরকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সৈন্য সমাবেশযুক্ত অঞ্চলে পরিণত করেছে। এই আইনের অধীনে সেনাবাহিনীকে প্রায় অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—গ্রেফতার, গুলি চালানো এমনকি হত্যারও।

  • গুম ও হত্যা: হাজারো কাশ্মীরী যুবক “গুম” বা enforced disappearance-এর শিকার হয়েছে। অনেককে আটকের পর আর ফিরে দেখা যায়নি।
  • নির্যাতন: সেনা ক্যাম্পগুলিতে নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দ্বারা।
  • নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: ইন্টারনেট শাটডাউন, কারফিউ এবং গণঅবরোধ কাশ্মীরীদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    ২. শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের সংস্কৃতি
    হিংসার মুখেও কাশ্মীরীরা তাদের সংগ্রামে শিল্প, সাহিত্য ও গণমাধ্যমকে হাতিয়ার করেছে:
  • কবিতা ও সঙ্গীত: কাশ্মীরি কবি ও শিল্পীরা তাদের বেদনা ও প্রতিরোধকে শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
  • সোশ্যাল মিডিয়া: ইন্টারনেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও, তরুণরা সাময়িকভাবে নেটওয়ার্ক পেলেই তাদের কণ্ঠ ছড়িয়ে দেয়।
  • আইনি লড়াই: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলা চলমান।
    ৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা
    কাশ্মীর ইস্যুতে বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকা হতাশাজনক:
  • জাতিসংঘের অকার্যকর ভূমিকা: ১৯৪৮ সালের রেজোলিউশনে কাশ্মীরে গণভোটের কথা বলা হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
  • পশ্চিমা দ্বিচারিতা: মানবাধিকারের নামে অন্যান্য সংকটে সরব হলেও কাশ্মীর নিয়ে নীরবতা পালন করা হয়, সম্ভবত ভারতের সাথে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থের কারণে।
    ৪. ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
    কোনো স্থায়ী সমাধান কাশ্মীরীদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়া সম্ভব নয়:
  • আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার: কাশ্মীরীদের ভোটের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দিতে হবে।
  • সেনা প্রত্যাহার: AFSPA-সহ দমনমূলক আইন বাতিল করে সেনা উপস্থিতি কমাতে হবে।
  • মানবাধিকার সংলাপ: নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
    উপসংহার
    কাশ্মীরের সংগ্রাম শুধু ভূখণ্ড নয়, মৌলিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদার লড়াই। যতদিন না বিশ্বসম্প্রদায় ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াবে, ততদিন এই ট্র্যাজেডি চলতেই থাকবে।

Share Option;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *